সোমবার, ৫ অক্টোবর, ২০০৯

রোমেল এবং লিভ-টুগেদার - সহাবস্থান? নাকি সহ-বাস?

রোমেল এবং লিভ-টুগেদার - সহাবস্থান? নাকি সহ-বাস?: "রোমেল অসুস্থ, দুদিন দোকানে আসেনা, তাই ঠিকানা নিয়ে গেলাম বাসার খোঁজে। নিম্নবিত্তদের এলাকা, গলি ঘুপচি পেরিয়ে কোনমতে খুঁজে পেলাম। দরজার দুটো ঘুসি মেরে দাঁড়াই, খোলবার অপেক্ষায়।



দরজা খুলতেই একটু অপ্রস্তুত হলাম, দরজা খুলছে একটা মেয়ে এবং আদিবাসী - রোমেলের চৌদ্দ পুরুষ বাঙালি এবং বরিশাইল্যা বলে জানি, এটা কে? মেয়েটাকে আগেও দেখেছি আমার বাসার ল্যান্ডিংএ, মনে পড়লো, পাশেইতো রোমেইল্ল্যার দোকান! হুম, এই কথা! বান্ধবী জুটেছে সেবাযত্নের জন্যে!



ব্যাটাকে দেখতে এসেছি শুনে ভেতরে যেতে দিলো। গিয়ে দেখি শালা মহা আনন্দে মুরগীর হাঁড় চিবোচ্ছে । আরেক ধাক্কা! হাস্যোজ্জ্বল রোমেলের ঘরটা বেশ সাজানো গুছোনো, ঠিক বিবাহিত মানুষের মত, মানে ছন্নছাড়া ব্যাচেলর আর বিবাহিত মানুষের ঘরের যা পার্থক্য তাই চোখে পড়লো। মেয়েটাও বেশ নিজের সংসারের মতই গিন্নিপনা করছে, খেতে অপরাগতা জানালে একটু মন খারাপ করলো, কৈলাম , 'চল মামু, চা গিলি।'



একটাই খটকা, শালার বাচালটা বৌর সাথে পরিচয় করায়না ক্যান?



পর্দা ঘেরা দোকান, রমজানে বোরখা আরকি। চা খাইতে বইসা ধরলাম চাইপা, 'কি মামু! শাদি করলা কওনাই ক্যান?' হ্যাটা হাসে, 'আরে মামু, আমারে বিয়া করবো কেডা? মাস গেলে পাই ছয় হাজার ট্যাকা, ফকিরের মাইয়া ছাড়া কেডায় মালা দিবো গলায়?' কৈলাম, 'সাইড কাইটো না মিয়া, গুঁতা খাইবা।'



ঝুলি খুললো রোমেইল্ল্যা, মেয়েটার সাথে পরিচয় প্রায় বছর, আদিবাসী মেয়ে, পড়াশুনা করেছে কিছুদুর, ঢাকাতে ছোটখাটো চাকরি করে কাছেই। বাবা-মা বেশ গরীব আর অসুস্থ, মেয়ের পাঠানো টাকা সংসারে বেশ লাগে, বিয়ের পরে হয়তো পারবে না, এই ভয়ে মেয়ে বিয়ে করছে না। আবার বাবা-মা আদিবাসী ছেলে ছাড়া অন্য কোন ছেলে মেনে নেবেন না জামাই হিসেবে।



রোমেলও প্রায় তাই, বাবা-মা গ্রামে, বোন দুটো বিয়ে দিতে হবে। রোমেল বড় ছেলে, ম্যাট্রিকের পরে সংসারের হাল ধরা, নানা ঘাটের পানি খেয়ে এখন ঢাকাতে, শ্রম বেঁচে, দেখতে শুনতে ভালো। ওদের পার করার যোগাড় করতেই হিমসিম, নিজের বিয়ে কবে হবে কে জানে।



পরিচয়ের পরে, ভালোলাগা, ভালোবাসা। বিয়ে নিয়ে দু'পরিবারেই সমস্যা হবে, তাই এক সাথে থাকা। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ছোট্ট ঘুপচি একটা দেড়-কামরার বাসা, দুজনের মোট আয়ের অর্ধেকটাই চলে যায় এখানে, খাওয়া পরার পরে যা থাকে দুজনার উদ্বৃত্ত, যার যার বাড়ীতে পাঠায়।



'মামু, কবে কপাল ফিরবো কে জানে, তাই লিগ্যা বয়সতো থাইমা থাকে না, দুইজনেই তাই কতা-বার্তা কৈয়া একলগে থাকি, লিপটুগেদার আরকি। ভালোবাসা করি, সময় হৈলে দিন ফিরলে বিয়াও করুম অরে।' - এভাবেই জানায় রোমেল, আমাদের রোমেইল্ল্যা, মোড়ের দোকানের কর্মচারী।



আরো নানা প্রসংগ পরে আসল কথা ওঠে, একটা কাজ ছিলো, কাজটা সেরে ফিরি পুরোনো বাসায়, এখনো এটা আমার জিম্মায়, শেষ কিছু ছোটখাটো কাজ সেরে রিক্সা নিই, নতুন বাসার উদ্দেশ্যে।



ফাঁকা রাস্তা, একটা চিন্তা মনে আসে, লিভ-টুগেদার, বাংলাটা কি হবে? সহাবস্থান ? নাকি সহ-বাস?



(ব্যাপক ফাউল পোষ্ট, মাইর দিতে চাইলে ঈদের দিনে শিডিউল দেন, হাজির হৈয়া যামু, বৈদেশিরা ভিসা ছাড়া শিডিউল দিলা আইবার পারুম না।)



পূর্ব প্রকাশ : আমার আস্তানা"

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন