শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০০৯

সামরিক বিশ্লেষনঃ একজন সেনাবাহিনী প্রধানের ক্ষমতা ও সম্মান বা মর্যাদা কতটুকু

সামরিক বিশ্লেষনঃ একজন সেনাবাহিনী প্রধানের ক্ষমতা ও সম্মান বা মর্যাদা কতটুকু: "বাংলাদেশ সরকার সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ বিশ্বস্থভাজনদের মধ্যে একজনকে সেনা প্রধানের দায়িত্ব দেন যার মেয়াদকাল সাধারনত পাচবছর হয়ে থাকে। একজন সেনা, নৌ বা বিমান বাহিনী প্রধান সরকারের নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মচারী বৈ আর কিছু নয় যে সরকারকে দেশের জনগনই রায় দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে। সামরিক বাহিনী সর্বদা দেশ ও সরকারের প্রতি অনুগত ও দায়িত্বশীল থাকবে এবং তারা কখনোই তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেখা যায় মেজর বা সমপর্যায়ের পদমর্যদায় যাওয়ার পরই অধিকাংশ অফিসাররা তাদের স্বার্থহাসিলের জন্য সুবিধামত বিভিন্ন েক্ষত্রে তাদের ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে থাকেন। এবং দেখা যায় দেশের প্রথম সারির কর্মকর্তা ও নাগরিকরাও তাদের তোয়াজ করে চলেন, এমন কি একজন সংসদ সদস্যও নিজের ক্ষমতা আর সম্মানটুকু বিকিয়ে দেন সামান্য একজন সেনা অফিসারের কাছে কিন্তু আমার ধারনা বাংলাদেশের অনেক সংসদ সদস্যই জানেন না মুলত তাদের মর্যাদা, সম্মান ও ক্ষমতা কতটুকু আর জানলেও চলে আসা ক্রমবর্ধমান সংস্কৃতির বাইরে যেতে পারেন না কারন দেশের ক্ষমতার কেন্দ্ররাই সেনাবাহিনীর কিছু অন্যায়ের প্রতি নমনীয় আচরন করে থাকেন। একজন সেনা কর্মকর্তা কিন্তু ঠিকই জানেন ব্যাপারটা।



বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীতে লোকবল আছে মাত্র ২২/২৩ হাজার, বিমান বাহিনীতে আরো কম আর সেনা বাহিনীতে কত হবে? বেসামরিক সহ সর্বসাকুল্যে একলক্ষ পঞ্চাশ হাজার হতে দুই লক্ষ। সরকার জনগনের টাকা বেতন দিয়ে যখন যখন এজন সেনাবাহিনী প্রধানকে নিয়োগ দেন তিনি হন ওই দুই লক্ষ লোকের প্রধান, অভিভাবক, গাইড যে শব্দ দ্বারাই বলুন না কেন তিনি জনগন কর্তৃক সরকারের মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত একজন কর্মচারী।

আর-

এবং একজন সংসদ সদস্য তিনি জনগনের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে সংসদে আসেন। একটি নির্বাচনী আসনে ৪/৫/৬/৭ লক্ষ ভোটার থাকে। মোট জন সংখ্যা আরো বেশী, তো একজন সংসদ সদস্য তার নির্বাচনী এলাকার কমপ-েক্ষ ৮/৯/১০ লক্ষ মানুষের প্রতিনিধি হয়ে সংসদে আসেন। আর একজন সেনাপ্রধান তদেরই মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে গড়ে দেড়/দুই লাখ সৈনিকের প্রধান হিসেবে দয়িত্ব পালন করেন। সেনা প্রধান তো অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক এবং ওই সাংসদই কিন্তু আবার এই সেনাপ্রধানেরও প্রতিনিধি। এবার আপনীই বিচার করুন কার ক্ষমতা ও সম্মান বেশী।



যে কোন ধরনের অনুষ্ঠানে যদি একই সাথে একজন সেনাবাহিনী প্রধান এবং একজন সাংসদকে আমন্ত্রন জাননো হয় তবে সাংসদই কিন্তু প্রধান অতিথি হন, সেনাপ্রধান নয় কারন সেনা প্রধানের চেয়ে একজন সাংসদের মর্যাদা অনেক বেশী। কিন্তু আমাদের সাংসদরা এ ব্যাপারে কতটুকু ওয়াকিবহাল কিংবা ওয়াকিবহাল থাকলেও দেশের মন্ত্রিপরিষদ এবং প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্টপতি'র সেনাবাহিনীর প্রতি নমনীয় আচরনের কারনে তারা তাদের ক্ষমতার ব্যবহার ও যথাযথ সম্মান পান না। যেমন কয়েকমাস আগে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে হিসেবের গড়মিল পেয়ে একজন সাংসদ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেভীর ক্যাপ্টেনকে আঙুল নাড়িয়ে সাবধান করে বলেছিলেন 'আই এম এ পার্লামেন্ট মেম্বার'। তার এই কথাটার অর্থটা কি এমন নয়; 'তুমি ভুলে যেও না আমি দশ লক্ষ জনগনের প্রতিনিধি।' সেই ছবি পত্রিকার প্রথম পাতায় এল, সরকার সমালোচনা ও চাপের মুখে পড়ল আর তার পরই তার বিভিন্ন ধরনের খারাপ কাজের কথা প্রকাশ হল যে তিনি ভাল মানুষ না ঠিক যেমন প্রকাশ হয়েছিল একজন সেক্টর কমান্ডার জামাতী ইসলামে যোগ দেয়ায় সেক্টর কমান্ডার'স ফোরামের ওয়েব সাইট থেকে তার নাম বাদ দেয়া হল এবং এতদিন পরে বলা হল তিনি কখনোই সেক্টর কমান্ডার ছিলেন না। আমি কারো পক্ষ নিচ্ছি না, আমরা তরুনরা কি শিখছি তাই বোঝাচ্ছি। আমরা শিখছি কিভাবে ইতিহাস বিকৃত করতে হয়, আমাদের শেখানো হচ্ছে।



কথা হচ্ছিল সেনাবাহিনী নিয়ে; বাংলাদেশের গনতন্ত্রের ইতিহাসে জেনারেল মইন সাহেব সেনাবাহিনীকে সবচেয়ে বেশী বির্তিকত করে গেছেন এবং তার সময়েই সর্বোচ্চ সংখ্যক সেনা অফিসাররা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে আর এটা আরো সহজে সম্ভবপর হয়েছে অধিকাংশ সামরিক সদস্যদের দ্বারাই RAB গঠন করার কারনে। সরকারকে চাপে ফেলে নিজের জেনারেল প্রমোশনটা ঠিকই জুটিয়ে নিয়েছেন কারন তিনি জানতেন বর্তমানে সামরিক ক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন। সম্প্রতি নাকি বলে বেড়াচ্ছেন ইচ্ছে করলে তিনি নাকি রাষ্টপতি হতে পারতেন, ক্ষমতায় যেতে পারতেন ইত্যাদি। আমার এক পরিচিত এক আপু আছে তিনি হাইস্কুল পর্যন্ত পড়লেখা করে একটি সরকারী ব্যাংকে ছোট একটা পদে চাকুরী করছেন, প্রায় সময়েই তিনি ব্যাংকের টাকা গুনেগুনে বান্ডিল করে রাখেন। একদিন কথাপ্রসংগে বললেন; ভাইরে, প্রতিদিন কত লাখ লাখ টাকা আমার হাতের উপরদিয়ে যায়, ইচ্ছে করলে দুই একলাখ টাকা রেখে দেয়া কোন ব্যাপারই না।

তো রাখেন না কেন? প্রশ্ন করলাম।

উত্তরে তিনি বললেন; না, সেই ইচ্ছে নাই। যে বেতন পাই আর দরকার নাই। পরে তো চাকরীই থাকবে না।



তো মইন সাহেবের কথা প্রসংগে আসি; এই ধরনের কথা যারা বলে আর কাজ করে তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। যে কোন একটা কিছু ঘটিয়ে ফেলে, ন্যায় হোক আর অন্যায় হোক তার সাহস আছে বলতে হবে। আর যে আড়ালে গিয়ে এই রকম গান গেয়ে বেড়ায়, তার সমস্যা হল সে ক্ষমতার এতো কাছে থেকেও ক্ষমতাটা বাগাতে পারল না এই আফছোস তার সারা জীবন থেকে যাবে আর সারা জীবন এই গান গাইতেই থাকবে, মিডিয়া না শুনলে একদিন নাতিদের কোলে বসিয়ে হলেও শুনাবে।

কারন তার বুকের মধ্যেখানে, মন যেখানে ক্ষমতার লোভও সেখানে ছিল আর এখন আছে শুধুই যন্ত্রনা আর আফসোস। কারন যতই তিনি ক্ষমতা দেখিয়েছেন আর সম্মান পাবার চেষ্টা করেছেন কিন্তু ভিতরে ভিতরে তিনি তো ঠিকই নিজের দ্বারাই ডোমিনেট হয়েছেন কারন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয়েও জনপ্রতিনিধিদের সামনে নিজেকে কখনো বড় মনে করতে পারেন নি। "

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন