শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০০৯

সফল হিরোর বিগত সংগ্রাম

সফল হিরোর বিগত সংগ্রাম: "null

আপনি জানেন কি? ঋত্বিক রোশন একজন প্রতিবন্ধী। আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না। না হবারই কথা। “কহোনা প্যায়ার হ্যা” দিয়ে মাত করে দেওয়া হিরো আবার প্রতিবন্ধী কিভাবে হয়। নিশ্চই ভাবছেন শর্মা মিঞা এখন শরাব পান করে করে ব্লগে লেখা শুরু করেছে। না জনাব, আমি মাতাল নই। আমি সত্যি কথাই বলছি।



ঋত্বিকের যখন ছয় বছর বয়স তখন থেকে শুরু হয় একটি সমস্যা- ঋত্বিক ঠিকমত কথা বলতে পারতেন না। তার কথা আটকে যেত। আমরা যেটিকে তোতলানো বলি। ‘প’, ‘ভ’, ‘এইচ’- এই ধরণের বর্ণযুক্ত শব্দে সব থেকে বেশি সমস্যা হত। আর আটকে গেলে সহসা কথা ফিরে আসতো না। এই কারণে ঋত্বিকের বাল্যকাল খুব বিড়ম্বনায় কেটেছে। পরিবার থেকে তো সাপোর্ট ছিল। কিন্তু সবকিছুর পরেও কখনও না কখনও সেই কমজোরি বড় হয়ে যায়। আর আমাদের সমাজই এমন যে- প্রতিবন্ধীদের নিয়ে মজা করা তো স্বাভাবিক মানুষদের স্বাভাবিক রঙ-ঢঙ। কলেজেও ঋত্বিক নিজের অক্ষমতার কারণে লাজুক ভাব নিয়ে চলতেন। ঋত্বিকের স্ত্রী সুজেনের সাথে প্রথম এক রেস্টুরেন্টে গিয়েও সমস্যা হয়েছিল ঋত্বিকের। খাবারে অর্ডার দিতে গিয়ে কথা আটকে যায়। তিনি বলতে পারছিলেন না। তখন সুজেন তা বুঝে নিয়ে অর্ডার দেন। এভাবেই শুরু তাদের পরস্পরকে বুঝে চলা। ঋত্বিকের যখন একুশ বছর বয়স তখন একদিন সকালে সৈকতে বেড়াতে গিয়ে দেখলেন কিছু বালক গুলতি দিয়ে খেলছে। প্রথম প্রথম না পারলে কয়েক দিন চেষ্টা করে শিখে ফেললেন। সেই শিখে ফেলাটাই তার কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে আসলো যে- আমি এটা যখন শিখতে পেরেছি তখন কথা বলাও শিখতে পারব। তারপর থেকে শুরু। একটি বর্ণ নিয়ে বিভিন্ন উচ্চারণ অনুশীলন। এভাবে করতে করতে তার কথা বলায় উন্নতি শুরু হলো। এখনও এক ঘন্টা অনুশীলন করেন তিনি প্রতিদিন। ছায়াছবির সংলাপ বলার আগেও করতে হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে কি বলবেন তা ঠিক করে নিতে হত। এখন বলতে গেলে স্বাভাবিক তিনি। কিন্তু তার প্রথম এওয়ার্ড অনুষ্ঠানে ‘থ্যাংক ইউ দুবাই’ বলার জন্য তাকে অনেক স্ট্রাগল করতে হয়েছিল। ঘরের ভেতরে অনুশীলন করতে হয়েছিল লুকিয়ে কারণ ঘর সাউন্ডপ্রুফ ছিল না। কিছুক্ষণ অনুশীলনের পরে ফ্রি স্পেসে আবার চেষ্টা করতে তাকে ওয়াশরুমে যেতে হয়েছিল।



শুধু তাই নয়। ঋত্বিকের ছিল স্কোলিওসিস; তার স্পাইন সোজা ছিল না। তিনি নাচতে পারতেন না বা একশন দৃশ্যের মত কাজ করতে গেলে তার শরীর ব্যথা হয়ে বিছানায় পড়ে থাকতে হত। পৃথিবীর বড় বড় ডাক্তার বলেছিলেন তুমি নায়ক হতে পারবে না। কারণ তুমি নাচতে পারবে না। আর জোর করে করতে গেলে অচিরেই তুমি হুইল চেয়ারে বসবে। তারপরে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হোন যে- আমাকে করতেই হবে। আমি যদি মারা যাই তাতেও বাধা নেই তবে আমাকে দেখে যেতে হবে। এভাবেই ঋত্বিকের পথ চলা।



ভাবতে অবাক হচ্ছেন? যোদা-আকবরের মত ছায়াছবিতে কঠিন সব ফারসী শব্দের সংমিশ্রিত সংলাপ যিনি অনায়াসে করেছেন তার কি কোন সমস্যা থাকতে পারে? নাচের আলাদা এক স্টাইলের জন্য যিনি বলিউডে সেরা তার কি কোন অক্ষমতা থাকতে পারে? হ্যাঁ সমস্যা ছিল কিন্তু ঋত্বিক তা জয় করেছেন। আজকে হাজার হাজার মানুষের হৃদয়ে যিনি জায়গা করে নিয়েছেন। যার আগমনই ছিল কহোনা প্যায়ারের মত হিট ছায়াছবি দিয়ে। ‘কোই মিল গয়া’, ‘কৃশ’, ‘ধুম-২’, ‘যোদা-আকবর’ ইত্যাদি ছায়াছবির একজন সফল অভিনেতা ঋত্বিক।



ঋত্বিক এক স্মৃতির কথা বলছিলেন। তার বাবার মাথা কামানো ছিল। দূর থেকে জনতা ডাকছিল- হেই রাকেশ রোশন, টাকলু রোশন। ঋত্বিকের খুব রাগ হয়েছিল- তার বাবাকে নিয়ে লোক মজা করছে। পরে ভাবলেন- হ্যাঁ এটাই সত্যি। টাক হয়েছে তো কি হয়েছে। আমার পছন্দ হয়- আমি আমার বাবাকে এভাবেই ভালবাসি। ঋত্বিক মনে করেন- যে যেভাবে আছে সে সেভাবেই যেন নিজেকে নিয়ে সুখী হয়। এই সমস্যাগুলো না থাকলে হয়তো তিনি আজকের ঋত্বিক হতে পারতেন না।



সত্যিই- একজন কামিয়াব হিরোর সফলতার পেছনের কাহিনীতে কত সংগ্রাম জুড়ে আছে। জীবন কারও জন্য পুষ্প শয্যা হয়ে থাকে আর কাউকে কন্টক শয্যায় পুষ্প শয্যা বানাতে হয়।



আসুন- আমরা প্রতিজ্ঞা করি, কোন প্রতিবন্ধীকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা-তামাশা করবো না।





*সূত্রঃ তেরে মেরে বিচ মেঁ"

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন