পাত্রী দেখা এবং দেখানোর গল্প।: "বিভিন্ন ব্লগে পাত্রী দেখা নিয়ে বেশ কয়েকটা লেখা পড়লাম। আমাদের অনেক মেধাবী, গুণী বন্ধুরা আছেন যারা পৃথিবীর অনেক দেশে থাকেন। এদের অনেকে ছুটিতে বা দেশে বেড়াতে এসে বিয়ে করার জন্য পাত্রী দেখার নামে মেয়ে দেখে বেড়ান। উদ্দেশ্য ভালো, সুন্দরী, মার্জিত ও গুণী মেয়ে খুঁজে বের করা। কিন্তু কেউ নিজের জীবনের কথা ভাবেন না, বাস্তবতা চিন্তা করে না। কয়েকদিন আগে এক ব্লগার ভাইয়ের লেখাটা পড়ে আমার মনে একটা ভাবনা এলো আর এই কাল্পনিক লেখাটা পোষ্ট দিলাম।
কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আগেই।
ঘটনা-১।
জনাব খালেক সাহেবের এক ছেলে আর এক মেয়ে। সুখের সংসার। ছেলে বাংলাদেশ থেকে গ্রাজুয়েশন করে কানাডা গেছে এমবিএ করার জন্য। মেয়ে বাংলাদেশের একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ করছে। ছেলের নাম সুমন আর মেয়ের নাম স্নেহা। কানাডা থেকে এমবিএ শেষ করে সুমন ঢাকা আসছে বিয়ে করার জন্য। বাবা-মা আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে ঘটক পাখি ভাই সবাইকে বলে রাখে তাদের ছেলের জন্য সুন্দরী (কেউ কিন্ত আগে বলেনা ভালো), মার্জিত পাত্রী চাই। যথা সময়ে বাবাজী সুমন বাংলাদেশে আসলেন। তাঁর বাবা- মা তাকে এক পাত্রী দেখাতে নিয়ে গেলেন। বর্ষার ঝিরঝির বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মিরপুরের এক বাসায় পাত্রী দেখতে গেলেন ফুল ফ্যামিলি। কন্যা পক্ষ যথাসাধ্য সম্মানের সহিত পাত্রপক্ষকে বরন করে নিলেন। সবাই বসার রুমে বসে আছেন। যেমন আমরা ছোট বেলা অধীর আগ্রহ ভরে বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক নাটক দেখার জন্য বিটিভির সামনে বসে থাকতাম। একগাঁদা বিজ্ঞাপন যন্ত্রণার পর যেমন শুরু হত কাংক্ষিত নাটিক। এখানে সেই রকম। অসংখ্য খাবার আইটেমের যন্ত্রণার পর এলো পাত্রী। একেক জনের একেক প্রশ্ন। কেউ জানতে চাচ্ছে গান জানে কিনা, কেউ রান্না জানে কিনা? কেউ আবার জানতে চাচ্ছে নাচ জানে কিনা? কেউ জানতে চাচ্ছে সূরা-কেরাত, কোরআন তেলোয়াত করতে জানে কিনা?পাত্রী হলে যেন সব জানতে হবে। যারা জিজ্ঞাসা করছে তাঁরা কিন্তু এর একটাও জানে কিনা সন্দেহ আছে! পাত্রী যা যা জানে হ্যাঁ বলে গেল। খাবার তাদের কাছে মনপুতঃ হলেও কন্যা তেমন মনপুতঃ হলো না। কারণ মেয়ে সুন্দরী না, বেশী লম্বা না (মেয়ের উচ্চতা ৫ফুট ৩ইঞ্চি)। সেখানে কিছু না বলে পরে জানাবো বলে সেইদিনের মত আয়োজন সম্পূর্ণ হল।
পরের ঘটক মারফত পাত্রী পক্ষকে তাদের অপছন্দের খবর জানানো হল। সেই ট্রিপে ছেলে সুমনের আর বিয়ে করা হলো না।
=======
ঘটনা-২।
জনাব খালেক সাহেবের মেয়ে স্নেহা পড়ালেখার শেষ করেছে। একটা প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করে। খালেক সাহেব মেয়ের বিয়ে দেয়ার জন্য আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে ঘটক পাখি ভাইকে খোঁজ লাগাল। তাদের ভালো পাত্র চাই, শিক্ষিত, মার্জিত, ভালো চাকুরি অথবা ব্যবসায়ী বাবার ছেলে।
যথারীতি এক সন্ধ্যায় তার মেয়েকে দেখতে এলো এক বিদেশ প্রবাসী বাংলাদেশী মেধাবী (যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি) ছেলে। খালেক যথাসাধ্য আদর-আপ্যায়ণের মাধ্যমে পাত্র পক্ষকে সম্মান করলেন। একি চিত্রের ফ্ল্যাশব্যাক হলো।
পাত্র পক্ষ পরে ঘটক মারফত তাদের অপছন্দের কথা জানিয়ে দিল। কারণ হিসেবে বলেছে, মেয়ে খাটো (মেয়ের উচ্চতা ৫ফুট ১ইঞ্চি), মেয়ে কালো (যদিও মেয়ে উজ্জ্বল শ্যামলা), মাথায় বয়কাট চুল ইত্যাদি। খালেক সাহেব মনে কষ্ট পেলেন। সেই রাতে ওনি ঘুমাতে পারলেন না। ওনি যখন নিজের ছেলের জন্য মেয়ে দেখতে গেছিলেন, তখন কিন্তু একবারও ভাবেন নি ঐ মেয়েটির বাবাও অপছন্দের কথা শুনলে ঘুমাতে পারবে না। নিয়তি কী এইভাবেই শাস্তি দেয়।
=========
আমি বলছিনা একজন মেয়েকে সবার ভালো লাগবে। আর ভালো লাগলেই যে বিয়ে হয়ে যাবে তেমনটাও না। সেটেল্ড ম্যারেজে আরো অনেক কিছু ডিপেন্ডেন্ট ইস্যূ কাজ করে। সেই গুলিও ভেবে দেখতে হয়। কিন্তু পাত্রের বাবা-মা, আত্মীয় স্বজনরা ভুলে যায়, তাদেরকেও একদিন মেয়ে বিয়ে দিতে হবে, একি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। সবাই যদি একটু সচেতন হই তাহলে পাত্রী দেখা আর দেখানো নিয়ে বিড়ম্বনা গুলো কমে যাবে বলে আশা করি।
=====
"
1 মন্তব্য(গুলি):
thank you vaia.....meyeder kache eta ekta lajja janak process...sabai ektu vadrovabe to katha bolte pare....
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন